-->

ব্লগার বাংলাদেশ যেভাবে Google AdSense অনুমোদন পেয়েছে!

আমাদের ব্লগে গুগল এ্যাডসেন্স অনুমোদন হওয়ার পর অনেকে আমাকে ব্যক্তিগতভাবে ফেইসবুকে, মোবাইলে ও মেইল করে জানতে চেয়েছিলেন যে, কিভাবে আমাদের ব্লগের এ্যাডসেন্স অনুমোদন করেছি এবং কি কি ধাপ অনুসরণ করেছি। আবার কেউ কেউ এ বিষয়ে একটি পোষ্ট করার জন্য অনুরোধ করেছিলেন। আমি তাদের সবাইকে এ নিয়ে একটি বিস্তারিত পোষ্ট করার আশ্বাস দিয়েছিলাম। প্রফেশনাল লাইফে ব্যস্ততার কারণে সঠিক সময়ে এ বিষয়ে পোষ্ট শেয়ার করা সম্ভব হয়ে উঠেনি।
প্রযুক্তি ডট কম যেভাবে Google AdSense অনুমোদন পেয়েছে!

আপনারা সবাই জানেন যে, গত ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৭ তারিখে গুগল তাদের অফিসিয়াল এ্যাডসেন্স ব্লগে বাংলা ভাষায় এ্যাডসেন্স সাপোর্টের ঘোষনা দিয়েছিল। সেই সাথে বাংলা ব্লগাররা গুগল এ্যাডসেন্স পাওয়ার জন্য আশার আলো দেখতে শুরু করে, কিন্তু তাৎক্ষনাত এ্যাডসেন্স পাওয়ার আবেদন করে অনুমোদন না হওয়ার অনাকাঙ্খিত মেইল পেয়ে হতাশ হয়ে পড়ে। আমি নিজেও খবরটা শুনার পর এ্যাডসেন্স পাওয়ার জন্য আবেদন করে তিন দিন পর যে রিপ্লে মেইল পেয়েছিলাম তা দেখে খুবই অবাক এবং হতাশ হয়েছিলাম।

আমি আজ আমাদের ব্লগে এ্যাডসেন্স অনুমোদন পাওয়ার প্রক্রিয়া নিয়ে আলোচনার সাথে সাথে কিছু এ্যাডভ্যান্স টিপস শেয়ার করব। আশা করছি আমাদের এ্যাডসেন্স পাওয়ার গল্প আপনাদের ব্লগে এ্যাডসেন্স বিষয়ে অনুপ্রাণিত করতঃ দ্রুত অনুমোদন পেতে সাহায্য করবে।

কিভাবে আমরা ব্লগিং শুরু করেছিলাম?

আমাদের ব্লগে গুগল এ্যাডসেন্স অনুমোদন পাওয়ার ধারাবাহিক প্রক্রিয়া নিয়ে আলোচনার পূর্বে ব্লগের ডোমেন নির্বাচন সহ ব্লগ চালু করার কিছু গল্প আপনাদের সামনে তুলে ধরছি।
  • ব্লগিং বিষয়ে আমার গল্পঃ ছোট বেলা থেকে আমার ভীতরে কম্পিউটার ও ইন্টারনেট সম্পর্কে এক ধরনের আগ্রহ কাজ করত। সেই সময় আমি ইংরেজী খুব বেশী বুঝতাম না বিধায় বিভিন্ন বাংলা ব্লগ থেকে প্রযুক্তি সংক্রান্ত নানা বিষয় পড়তাম। এ ভাবে বাংলা ব্লগ পড়তে পড়তে জানার আগ্রহটা দিন দিন বাড়তে থাকে। এক সময় প্রযুক্তি সংক্রান্ত বাংলা ব্লগগুলির গুরুত্বপূর্ণ প্রায় সকল পোষ্ট পড়া শেষ হয়ে যায়। পরবর্তীতে আমি প্রযুক্তি সংক্রান্ত ভালমানের ইংরেজী ব্লগ পড়তে শুরু করি। সেই জানার আগ্রহ থেকে নিজের একটি পার্সোনাল ব্লগ তৈরি করার স্বপ্ন দেখতে শুরু করি। তবে ব্লগিং কিভাবে শুরু করব, কোন প্লাটফর্মে ব্লগিং করব, কোন ধরনের টপিক নিয়ে কাজ করব ও কিভাবে ব্লগিং করলে অনলাইন থেকে ইনকাম করা যাবে সে বিষয়ে পরিষ্কার কোন সিদ্ধান্তে পৌছতে পারছিলাম না। অবশেষে সিদ্ধান্ত নিলাম গুগল ব্লগার দিয়ে ইংরেজীতে ব্লগিং শুরু করব, কিন্তু কি ধরনের টপিক নিয়ে কাজ করব সি বিষয়েও কোন সিদ্ধান্তে পৌছতে পারছিলাম না। কারণ ব্লগিং করার জন্য যে জ্ঞানের প্রয়োজন হয় তার কোনটি সম্পর্কে আমার পরিপূর্ণ ধারনা ছিল না। অবশেষে অনলাইন থেকে বিভিন্ন ব্লগের ভালমানের কনটেন্ট কপি করে গুগল ব্লগার এর ব্লগস্পট ডোমেন নিয়ে কাজ শুরু করি। প্রায় ৩০/৪০ টি পোষ্ট করার পর যখন গুগল এ্যাডসেন্সের আবেদন করি তখন এ্যাডসেন্স কনটেন্ট কপিরাইটের জন্য আবেদন সরাসরি নাকচ করে দেয়। এভাবে প্রায় ৩/৪ বার আবেদন করে প্রত্যেকবার ফলাফল একই পেয়ে বুঝতে পারলাম কপিরাইট কনটেন্ট দিয়ে কোনভাবে এ্যাডসেন্স অনুমোদন পাওয়া সম্ভব নয়। তখনই ব্লগটি ডিলিট করে নিজে থেকে কিছু করার চেষ্টা করি।
  • প্রযুক্তি ডট কম এর গল্পঃ আমাদের এই ব্লগটি চালু করার পূর্বে আমি একটি কম্পিউটার ট্রেনিং ইনস্টিটিউট থেকে HTML ও CSS বিষয়ে ছয় মাসের কোর্স সম্পন্ন করে নেই। সেখান থেকে HTML ও CSS বিষয়ে মোটামোটি ভাল ধারণা অর্জণ করতে সক্ষম হই। পরবর্তীতে অনলাইনে W3School হতে ওয়েব ডিজাইনের এ্যাডভ্যান্স বিষয়গুলি আয়ত্ত করে নেই। ওয়েব ডিজাইনের এই অভিজ্ঞতা থেকে আমি সিদ্ধান্ত নেই যে, ওয়েব ডিজাইন, এসইও এবং প্রযুক্তি বিষয়ে একটি বাংলা ব্লগ চালু করব। সেই সময় অর্থাৎ ১ মার্চ ২০১৫ তারিখে আমি ও আমার চাচাত বোন আফসানা মিম মিলে “প্রযুক্তি ডট কম” বাংলা ব্লগটি চালু করি। চালু করার কিছু দিনের মধ্যে অনেক বাংলা ব্লগারদের সাড়া পেয়েছিলাম। তখন ৪/৫ জন বাংলা ব্লগার আমাদের ব্লগে গ্যাস্ট ব্লগার হিসেবেও কাজ করেছিলেন, কিন্তু তারা কেউ খুব বেশী দিন নিয়মিত না থাকার কারণে অবশেষে ব্লগ থেকে রিমুভ করতে বাধ্য হয়েছিলাম। আমরা যখন এই ব্লগটি চালু করি তখনো Techtunes, Some Where In Blog ও হাতে গণা আরো কিছু ব্লগ ছাড়া প্রযুক্তি বিষয়ের তেমন কোন বাংলা ব্লগ ছিল না। বিশেষ করে গুগল ব্লগার বিষয়ে বাংলা কোন ব্লগ ছিলই না। সে জন্য মোটামোটি ভিজিটর ও পাঠকদের সাড়া পাওয়ায় কাজ করতে আগ্রহ পেয়েছিলাম। উল্লেখ্য যে, Copyscape এর রিপোর্ট অনুসারে বর্তমানে আমাদের ব্লগে ৮৭% ইউনিক কনটেন্ট রয়েছে। সবগুলো পোষ্ট নিজ হাতে লেখা সত্বেও ১৩% আর্টিকেল কোন না কোনভাবে অন্য ব্লগ এবং ওয়েবসাইটের সাথে মিলে গেছে!!!
  • আমাদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনাঃ আমাদের ব্লগে প্রযুক্তি সংক্রান্ত আরো কিছু বিষয় নিয়ে আর্টিকেল পাবলিশ করার পরিকল্পনা রয়েছে। বিশেষ করে Windows, Android ও WordPress টপিকগুলি যুক্ত করার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনাতে রয়েছে, কিন্তু কোন ভালমানের লেখক না পাওয়ার কারনে এখনো বিষয়গুলি সংযোজন করা সম্ভব হচ্ছে না। তবে ভবিষ্যতে এ বিষয়গুলি অবশ্যই আমাদের ব্লগে সংযুক্ত করা হবে। আপনারা যদি কেউ উপরোক্ত বিষয়ে কাজ করতে আগ্রহী থাকেন তাহলে আমাদের ব্লগের যোগাযোগ ফরম এর মাধ্যমে জানাতে পারেন।

কিভাবে আমরা এ্যাডসেন্স পেলাম?

আমরা যখন এই ব্লগটি চালু করেছিলাম তখন বাংলা ব্লগে গুগল এ্যাডসেন্স সাপোর্ট করত না, অর্থাৎ বাংলা ব্লগ থেকে ‍গুগল এ্যাডসেন্স এর জন্য আবেদন করার কোন সুযোগ ছিল না। তারপরও আমরা ভবিষ্যতে গুগল এ্যাডসেন্স পাওয়ার আশা নিয়ে কাজ করে এগিয়ে যাচ্ছিলাম। বাংলা ভাষায় গুগল এ্যাডসেন্স সাপোর্ট করার বিষয়ে আমি ব্যক্তিগতভাবে গুগল এ্যাডসেন্স টিমের সাথে বেশ কয়েকবার যোগাযোগ করেছি, কিন্তু তারা এ বিষয়ে আমাকে কোন প্রকার প্রতি উত্তর দেয়নি। অবশেষে গত ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৭ তারিখে তারা বাংলা ভাষাকে সাপোর্ট দেয়।

গুগল এ্যাডসেন্স পাওয়ার আগে কিভাবে একটি ব্লগ সেটআপ করবেন বা কি কি এসইও অনুসরণ করবেন সে বিষয়ে আমরা ইতোপূর্বে ব্লগে বিস্তারিত শেয়ার করেছি। সে জন্য এ বিষয় নিয়ে নতুন করে কিছু লিখতে চাইছি না। আপনি আমাদের ব্লগের পোষ্টগুলি পড়লে এ্যাডসেন্স পাওয়ার জন্য কি কি করতে হবে সে বিষয়ে বিস্তারিত জানতে পারবেন। এখানে শুধুমাত্র আমাদের ব্লগে এ্যাডসেন্স পাওয়ার গল্প নিয়ে আলোচনা করব। আবেদনের প্রক্রিয়া থেকে আপনার বাংলা ব্লগের সমস্যা সম্পর্কে কিছুটা ধারনা অর্জণ করতে পারবেন।
  • প্রথম আবেদনঃ সেপ্টেম্বর মাসের ২৬ তারিখে বাংলা ভাষায় গুগল এ্যাডসেন্স সাপোর্টের ঘোষনা দেওয়ার দুই দিন পর এ্যাডসেন্স পাওয়ার জন্য আবেদন করি। আবেদন করার ঠিক তিন দিন পর Language Unsupported বলে গুগল এ্যাডসেন্স আমাকে জানায়। বিষয়টি দেখে অবাক হওয়ার পাশাপাশি কিছুটা হাসি পেয়েছিল। তখন ভেবেছিলাম তারা হয়ত এখনো প্রস্তুত নয় বিধায় এ ধরনের সমস্যার কথা বলছে। সেই সাথে কনফিডেন্স ছিল যে, তারা আমার ব্লগের কনটেন্ট বা ব্লগ নিয়ে কোন সমস্যার কথা জানায়নি। সেই সময়ে অন্যরা Language Unsupported এর পাশাপাশি আরো বিভিন্ন সমস্যা আছে বলে মেইল পায়। এ দিক দিয়ে আমার আত্মবিশ্বাস ছিল যে, ভবিষ্যতে তারা আমার ব্লগকে অনুমোদন করবে।
  • দ্বিতীয় আবেদনঃ প্রথম আবেদনের মেইল পাওয়ার ৪/৫ দিন পর আবার এ্যাডসেন্স এর জন্য আবেদন করি। সে সময় আবারো তিন দিন পর Language Unsupported বলে জানায়। ঠিক তার এক দিন পর একজন ব্লগার জানান যে, তার বাংলা ব্লগে গুগল এ্যাডসেন্স অনুমোদন হয়েছে। যথারিতী আমি আবারও আবেদন করি, কিন্তু তিন দিন পর ফলাফল সেই একই হয়। তখন সিদ্ধান্ত নেই বাংলা ব্লগে এ্যাডসেন্স অনুমোদন হচ্ছে এমন নির্ভরযোগ্য সংবাদ না পাওয়া পর্যন্ত আবেদন করব না। 
  • তৃতীয় আবেদনঃ তৃতীয় বার যখন আবেদন করি তখন দেখতে পাই যে, “এসো বন্ধু” নামে একটি বাংলা ব্লগ তাদের ব্লগে এ্যাডসেন্স ব্যবহার করছেন। সেই ব্লগের এ্যাডমিনের সাথে যোগাযোক্রমে জানতে পারি তিনি বাংলা ব্লগ দিয়ে এ্যাডসেন্স অনুমোদন পেয়েছেন। তখন আমি আবারও এ্যাডসেন্স এর জন্য আবেদন করি। সেই আবেদন করার ৫/৬ দিন অতিবাহিত হওয়ার পর কোন রিপ্লে মেইল পাইনি। সেই সময়ে আরো অনেক বাংলা ব্লগার বলেছিলেন তাদেরও একই সমস্যা হচ্ছে। তখন সিদ্ধান্ত নিলাম এই এ্যাডসেন্স একাউন্টটি বাতীল করে নতুন একটি জিমেইল আইডি খোলে আবার আবেদন করব। তখন সম্পূর্ণ নতুন ঠিকানা ও মোবাইল নাম্বার ব্যবহার করে নতুন আইডি দিয়ে এ্যাডসেন্স এর আবেদন করি। নতুন আইডি থেকে আবেদন করার দুই দিন পর রিপ্লে মেইলে আমার এ্যাডসেন্স অনুমোদন হয়নি মর্মে জানায়। কারণ হিসেবে বলে আমার ব্লগে পর্যাপ্ত কনটেন্ট নেই, পোষ্টে অতিরিক্ত Image রয়েছে এবং সাইটের নেভিগেশন ভালো না। এ সব বিষয় দেখে আমি অবাক হয়ে যাই। কারণ আমার ব্লগে পর্যাপ্ত কনটেন্ট, Image ও নেভিগেশন কোনটির সমস্যা ছিল না। তখন সিদ্ধান্ত নিলাম ভালোমানের নতুন পাঁচটি আর্টিকেল পাবলিশ করব এবং পাঁচ দিন পর আবার আবেদন করব। কিন্তু চার দিন পর গুগল এ্যাডসেন্স আমাকে একটি মেইল দিয়ে জানায় যে, আমার ব্লগের এ্যাডসেন্স অনুমোদন হয়েছে। অথচ আমি তখন এ্যাডসেন্স এর জন্য আবেদন করিনি, কিন্তু এ্যাডসেন্স একাউন্টে লগইন করে দেখি অনুমোদন হয়নি।
  • শেষ আবেদনঃ উপরোক্ত সমস্যাটি পাওয়ার সাথে সাথে আমি আবারও গুগল এ্যাডসেন্স পাওয়ার জন্য আবেদন করি। আবেদন করার পর দিনই গুগল আমাকে মেইল করে জানায় আমার ব্লগে গুগল এ্যাডসেন্স অনুমোদন হয়েছে।
সর্বশেষঃ আসলে গুগল এ্যাডসেন্স সাপোর্ট করার ঘোষনা দেওয়ার পর পুরোপুরি প্রস্তুত হতে সময় নিয়েছিল বিধায় কিছু দিন সমস্যা হয়েছিল। মোট চার বার আবেদন করার পর আমাদের ব্লগে এ্যাডসেন্স অনুমোদন করতে সর্বমোট ২৯ দিন সময় লেগেছে। তবে এখন যাদের ব্লগে ভালমানের আর্টিকেল রয়েছে তারা এই ধরনের সমস্যার সম্মুখিন হচ্ছে না। আপনি যদি ভলমানের ইউনিক আর্টিকেল লিখে একটি ডট কম ডোমেন নিয়ে আবেদন করেন তাহলে অল্প দিনেই এ্যাডসেন্স অনুমোদন করতে পারবেন।

পোস্ট রেটিং করুন

আরও নতুন পোস্ট পুরানো পোস্ট

সম্পর্কিত পোস্টসমূহ

    লাইক এবং ম্যাসেজ করুন
    ×
    _

    নিচে থেকে আমাদের পেজ লাইক করুন সঙ্গে চাইলে আমাদের ম্যাসেজ ও করতে পারেন।

    Get the latest article updates from this site via email for free!