আপনারা সবাই একটি বিষয় পরিষ্কারভাবে জানেন যে, ইউটিউব চ্যানেলের ভিডিওতে যার যত বেশী ভিউয়ার থাকবে গুগল এ্যাডসেন্স হতে তার তত বেশী ইনকাম হবে। বর্তমানে অনলাইন হতে আয় করার যত পদ্ধতী রয়েছে সেগুলির মধ্যে ইউটিউব হচ্ছে সবচাইতে সহজ ও বিশ্বস্ত একটি প্লাটফর্ম। সাধারণত ওয়েবসাইট থেকে বা ব্লগিং করে অনলাইন হতে আয় করার ক্ষেত্রে যে সকল অভিজ্ঞতা থাকতে হয় ইউটিউব এর ক্ষেত্রে সে ধরনের কোন অভীজ্ঞতার প্রয়োজন হয় না। একজন ব্যক্তি শুধুমাত্র তার নিজস্ব ক্যামেরার মাধ্যমে বিভিন্ন দৃশ্য ধারন করতঃ ভালমানের ভিডিও আপলোড করতে পারলে কোন ধরনের অতিরিক্ত অভিজ্ঞতা ছাড়াই ইউটিউব থেকে টাকা উপার্জন করতে সক্ষম হবেন। এ ছাড়াও আপনি যে বিষয়ে ভাল জানেন সে বিষয়ে টিউটরিয়াল তৈরি করে টাকা আয় করতে পারবেন। আমার জানামতে ইন্টারনেট হতে টাকা আয় করার মত সহজ অন্য কোন প্লাটফর্ম আদৌ নেই।
কিছু টাইপের ইউটিউব ভিডিও আছে যেগুলির অনেক কম্পিটিশন রয়েছে। বিশেষকরে যারা টিউটরিয়াল টাইপের ভিডিও শেয়ার করে থাকেন তাদের কম্পিটিশনটা একটু বেশী হয়ে থাকে। কারণ এ ধরনের ভিডিও ইউটিউবে বেশী পরিমানে আপলোড করা হয়ে থাকে। আর যারা প্রকৃতির বিভিন্ন আশ্বচর্য্য জনক বিষয় নিয়ে আলোক চিত্র ধারণ করে ইউটিউবে আপলোড করেন তাদের ক্ষেত্রে এই কম্পিটিশনটা কম হয়ে থাকে। উদহারণ স্বরূপ - যারা Wild Life নিয়ে ভিডিও শেয়ার করেন তাদের কম্পিটিশন কম ও জনপ্রিয়তা বেশী হওয়ার কারণে সহজে বেশী পরিমানে ভিউয়ার পেয়ে যান। আপনি এ ধরনের ভিডিও আপলোড করতে পারলে খুব সহজে সাফল্য অর্জন করতে পারবেন।
তবে যাদের ভিডিও কম্পিটিশন বেশী রয়েছে তারা কিছু টেকনিক অনুসরণ করলে অন্যদের চ্যানেল পিছনে ফেলে ইউটিউব সার্চ রেজাল্টে আপনার অবস্থান তৈরি করে নিতে পারবেন। YouTube Channel এর Views বৃদ্ধি করার জন্য আমরা আজ কিছু টেকনিক শেয়ার করব যেগুলিকে কাজে লাগিয়ে আপনার চ্যানেল অল্পদিনে জনপ্রিয় করতে পারবেন। আজকের পোষ্টের টপিকগুলি সংক্ষেপে দেখে নিন-
- ভালভাবে ভিডিও Titles, Descriptions ও Tags ব্যবহার।
- ভিডিও বিভিন্ন Social Media তে শেয়ার করা।
- ভিডিও ভালভাবে Editing ও বিভিন্ন ইফেক্ট সংযুক্ত করা।
- Subscriber বৃদ্ধি করা।
উপরোল্লখিত সবগুলি বিষয় নিয়ে আজ আমরা আলোচনা করব। তবে ভিডিও আপলোড করার পূর্বে অবশ্যই আপনার ইউটিউব চ্যানেলটি ভালভাবে সাজিয়ে নিবেন। কিভাবে ইউটিউব চ্যানেল তৈরি করতঃ সুন্দরভাবে সাজাবেন সে বিষয়ে ধারনা না থাকলে আমাদের পূর্বে পোষ্ট থেকে বিস্তারিত দেখে নিতে পারেন।
ভিডিও এর সঠিক বিবরণঃ
- ভিডিও Titles: ভিডিও তৈরি করার পর ভিডিওটির নাম এমনভাবে দেবেন যাতে ভিডিও এর উপকরনের সাথে মিল থাকে। আপনি যদি নাটক তৈরি করে ভিডিও এর নাম মুভি হিসেবে দেন, সে ক্ষেত্রে ভিডিও এর ভিউ পাওয়ার সম্ভাবনা প্রথমেই কমে যায়। আপনি যে বিষয় নিয়ে ভিডিও তৈরি করেছেন ঠিক সেই বিষয়ের সাথে মিল রেখে সুন্দরভাবে ভিডিও এর টাইটেল ইংরেজীতে লিখবেন।
- ভিডিও Descriptions: ভিডিও আপলোড হওয়ার সাথে সাথে ভিডিও এর নিচে Descriptions লিখার জন্য একটি খালি ঘর দেখতে পাবেন। এখানে কমপক্ষে ০৮-১০ লাইনে সাজিয়ে Descriptions লিখে দিতে হয়। আপনার ভিডিওটি সম্পর্কে সার্চ হতে পারে এমন আর্টিকেল এর সমন্বয়ে গোছালভাবে একটি ছোট Descriptions লিখে দেবেন। এটা মূলত ম্যাটা Descriptions ট্যাগ এর ন্যায় কাজ করবে। কেউ যখন আপনার ভিডিও এর বিষয়ের সাথে মিল রয়েছে এমন কিছু লিখে ইউটিউবে সার্চ করবে, তখন টাইটেলে সেই কীওয়ার্ড না পেয়ে Descriptions এ পেয়ে গেলে ভিডিওটি সার্চ রেজাল্টে চলে আসার সম্ভাবনা থাকে।
- ভিডিও Tags: অধিকাংশ নতুন YouTuber এ বিষয়টি না বুঝার কারনে কোন গুরুত্ব দেন না। ভিডিও আপলোড করার পর Descriptions এর ঠিক নিচের দিকে Tags দেওয়ার জন্য একটি খালি ঘর দেখতে পাবেন। এখানে ছোট ছোট ট্যাগ দেওয়া থাকে। আপনি শুধুমাত্র আপনার ভিডিওটি কোন ক্যাটাগরির সেটা সিলেক্ট করে দেবেন, অর্থাৎ আপনার ভিডিওটি যে টাইপের ঠিক সে ধরনের বা কাছাকাছি ধরনের ২-৪ টি Tags সিলেক্ট করে দেবেন। এতেকরে সার্চ ইঞ্জিন আপনার ভিডিও এর ধরণ সহজে বুঝে নিতে সক্ষম হবে।
ভিডিও বিভিন্ন Social Media তে শেয়ার করাঃ
- দ্রুত শেয়ার করাঃ আপনি যখন ভিডিও আপলোড করবেন তখন ভিডিওটি ফেলে না রেখে নিজে নিজে বিভিন্ন মাধ্যমে শেয়ার করতে শুরু করবেন। কারণ আপনার চ্যানেলটি নতুন হয়ে থাকলে সদ্য আপলোড হওয়া ভিডিওটি সম্পর্কে কেউ জানবে না। সে জন্য আপলোড করার পর যত দ্রুত সম্ভব সোসিয়াল মিডিয়া’সহ বিভিন্ন মাধ্যমে শেয়ার করতে থাকবেন। এতে করে অন্তত ঐ মিডিয়ার ক্রলারগুলি আপনার ভিডিওটি সম্পর্কে ধারনা পেয়ে কিছু ভিজিটর এনে দিতে সক্ষম হবে। আপনার ভিডিওটি পুরাতন হওয়ার সাথে সাথে শেয়ার ও ভিউয়ার বৃদ্ধি না পেলে সার্চ ইঞ্জিনের কাছে ভিডিও এর মূল্য কমে যাবে।
- ইমেইলের মাধ্যমে জানিয়ে দেওয়াঃ অনলাইনে নিয়মিত সম্পৃক্ত থাকে এমন কিছু ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের ইমেইল এড্রেস সংগ্রহ করে তাদেরকে ইমেইলের মাধ্যমে আপনার ভিডিওটি সম্পর্কে জানিয়ে দিতে পারেন। এ বিষয়টি আপনার ভিডিও এর ভিউয়ার বৃদ্ধি করার পাশাপাশি সবার সাথে এক ধরনের কমিউনিকেশন তৈরি করবে। এ কাজটি করতে পারলে নিঃসন্দেহ আপনার ভিডিওতে কিছু ট্রাফিক পেয়ে যাবেন।
- সোসিয়াল মিডিয়াতে শেয়ারঃ ব্লগিং কিংবা ইউটিউব উভয় ক্ষেত্রে ট্রাফিক বৃদ্ধি করার ক্ষেত্রে সোসিয়াল মিডিয়া গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে। ফেইসবুক, টুইটার, গুগল প্লাস ও ইনস্টগ্রাম সহ বিভিন্ন সোসিয়াল মিডিয়াতে ইউটিউব চ্যালেন এর নামে একটি পেজ তৈরি করে ফলোয়ার বৃদ্ধি করতে পারলে খুব সহজে ভিডিও এর ভিউয়ার বৃদ্ধি করে নিতে পারবেন।
- ব্লগ এবং ওয়েবসাইটে শেয়ারঃ আপনার পরিচিত বা বন্ধুদের ভালমানের ব্লগে ভিডিও শেয়ার করেও ভিউয়ার বৃদ্ধি করে নিতে পারবেন। বর্তমানে গুগল ব্লগস্পট এর মাধ্যমে খুব সহজে একটি নিজস্ব ব্লগ তৈরি করে নেওয়া যায়। এ ক্ষেত্রে আপনার ইউটিউব চ্যানেল এর ভিডিওগুলি শেয়ার করার পাশাপাশি ভিডিও সম্পর্কে কিছু আর্টিকেল শেয়ার করে ভিডিও এর ভিউয়ার বৃদ্ধি করে নিতে পারেন।
ভিডিও Editing ও বিভিন্ন ইফেক্ট সংযুক্ত করাঃ
- আকর্ষণীয় ভিডিও তৈরিঃ টিউটরিয়াল ভিডিও তৈরি করার ক্ষেত্রে ভিডিও Editing এর মাধ্যমে প্রফেশনাল মানের ভিডিও তৈরি করাটা খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। এ ক্ষেত্রে আপনি উন্নতমানের ভিডিও Editing সফটওয়ারের কাজ কোন প্রতিষ্ঠান থেকে ভালভাবে শিখে নিতে পারেন। বিভিন্ন ধরনের Visual ইফেক্ট যুক্ত করে যত ভালভাবে ভিডিও উপস্থাপন করতে পারবেন, আপনার চ্যানেলে তত বেশী ভিজিটর ধরে রাখতে সক্ষম হবেন।
- Background Music: ভিডিও ভালভাবে এ্যাডিট করার পাশপাশি ভিডিও এর ব্যকগ্রাউন্ডে কিছু আকর্ষণীয় মিউজিক রাখবেন। এ কাজটির ফলে ভিডিওটি সম্পর্কে ভিউয়ারদের আকর্ষণ বৃদ্ধি পাবে। তবে লক্ষ্য রাখবেন যে, ভিডিওতে যখন নিজস্ব সাউন্ড থাকবে তখন আপনার সাউন্ডের চাইতে যেন মিউজিক এর সাউন্ড বেশী না হয়। নিজেস্ব ভয়েস নিয়ে টিউটরিয়াল তৈরির ক্ষেত্রে আঞ্চলিকতা পরিহার করে স্মার্ট, সুন্দর ও সাবলিন ভাষায় উপস্থাপন করার চেষ্টা করবেন।
- আপলোড করার পর এ্যাডিটঃ ভিডিও আপলোড করার পর ইউটিউব ভিডিও এ্যাডিটর ব্যবহার করে আপনার চ্যানেল এর অন্যান্য ভিডিও Annotation এর মাধ্যমে Text লিংক আকারে যুক্ত করে দেবেন। এ ক্ষেত্রে ভিউয়ার আপনার ভিডিওটি দেখার পর ভাল লাগলে অন্য ভিডিওটিও দেখতে আগ্রহ প্রকাশ করবে। এ বিষয়টি সহজে আপনার বিভিন্ন ভিডিও এর ভিউয়ার বৃদ্ধি করবে।
Organic Views বৃদ্ধি করাঃ
- Subscriber বৃদ্ধিঃ ইন্টারনেটে যে কোন ক্ষেত্রে সাফল্যের জন্য Organic ট্রাফিক খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। Organic ট্রাফিক ছাড়া কোনভাবে ব্লগ কিংবা ইউটিউব চ্যানেল এর র্যাংক বৃদ্ধি করা সম্ভব হয় না। YouTube এর ক্ষেত্রে Organic ট্রাফিক পাওয়ার জন্য অবশ্যই আপনার চ্যানেলের Subscriber বৃদ্ধি করে নিতে হবে। এক কথায় যার চ্যানেলে যত বেশী Subscriber থাকবে তার ভিডিও ভিউ ও আয়ের পরিমান তত বেশী হবে। Subscriber বৃদ্ধি করার জন্য আপনার ভিডিও এর ভীতরে কথা বলার ফাকে ফাকে Subscribe করে নেওয়ার জন্য অনুরোধ করবেন এবং ভিডিওতে Subscribe অপশন যুক্ত করে নিবেন।
- ভিডিওতে Like ও Dislike বৃদ্ধিঃ ঠিক আগের মত ভিডিও এর ভীতরে কথা বলার সময় Subscribe করার পাশাপাশি Like করারও আহ্বান জানাবেন। আপনার ভিডিওতে প্রচুর পরিমানে লাইক থাকার পাশাপাশি কিছু Dislike থাকলে দুটিই ট্রাফিক বৃদ্ধিতে Like হিসেবে কাজ করবে। কারণ ভিডিওতে Dislike এর চাইতে Like বেশী থাকলে Dislike তার প্রকৃত অর্থ বহন করতে পারে না। ইউটিউব ধরে নেয় ভিডিওটিতে ভাল কিছু আছে যার জন্য Like ও Dislike হচ্ছে। তবে Like এর চাইতে Dislike বেশী হলে হিতের বিপরীত হতে পারে। এ ক্ষেত্রে অবশ্যই আপনার ভিডিওটির মানের উপর খেয়াল রাখবেন। তাহলে কোন ভাবে Dislike বেশী হবে না।
- Comments বৃদ্ধিঃ ভাল র্যাংক তৈরিতে সার্চ ইঞ্জিনের কাছে কমেন্ট অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। কোন ভিডিওতে যদি প্রচুর পরিমানে কমেন্ট থাকে, তবে সেই ভিডিওটি কমেন্টবিহীন অনেক ভালমানের ভিডিওকে পিছনে ফেলে সার্চ রেজাল্টের উপরে চলে আসতে পারবে। এ ক্ষেত্রে আপনি ভিডিওটি এমনভাবে তৈরি করুন যাতে ভিউয়াররা ভিডিওটি দেখার পর তাদের মনে কিছু ছোট ছোট প্রশ্ন জাগে। সেই প্রশ্নের জের ধরে আপনার ভিডিও এর কমেন্ট সেকশনে কমেন্ট বৃদ্ধি করে নিতে সমর্থ হবেন।
শেষ কথাঃ ভালমানের ভিডিও আপলোড করে উপরের সবগুলি টিপস যথাযথভাবে অনুসরণ করলে আপনি অল্প দিনে একজন ভালমানের YouTuber হতে পারবেন। এ বিষয়টি অবশ্যই খেয়াল রাখবেন যে, ভালমানের ভিডিও ছাড়া আপনি কোনভাবে ভিউয়ার বৃদ্ধি করতে পারবেন না। কোন রকম ছয় নয় টাইপের ভিডিও আপলোড করে ভিউয়ার বৃদ্ধি করা সম্ভব হবে না। বাংলাদেশে কিছু YouTuber রয়েছেন যারা মনেকরেন বিভিন্ন সাইট হতে অন্যের ভিডিও আপলোড করে ইউটিউব থেকে আয় করা সম্ভব। এ কাজটি কখনো করতে যাবেন না। ইউটিউব কোন ধরনের কপি করা ভিডিও গ্রহন করে না। তবে Fair Usage Policy অনুসরণ করে অন্যের ভিডিও এর কিছু অংশ ব্যবহার করতে পারেন। এ ক্ষেত্রেও অনেক নিয়ম রয়েছে যেগুলি নিয়ে অন্য কোন পোষ্টে আলোচনা করব।